জাতীয় নির্বাচনের আগেই চাপের মুখে সরকার!
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে ঢাকার কড়া জবাব
১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৮ বিকাল
সেনাপ্রধানের সঙ্গে পাকিস্তান নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ
১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৬ বিকাল
নতুন বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবীদের ধৈর্য পরীক্ষা করবেন না: প্রেসসচিব
১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৫ বিকাল
উপদেষ্টা ফরিদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ
১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৪ বিকাল
সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের ফের কর্মবিরতি ঘোষণা
১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৩ বিকাল
এনটিএমসির নতুন ডিজি মেজর জেনারেল ওসমান সরোয়ার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪২ বিকাল
নির্বাচনের আগেই চাপের মুখে সরকার!
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে যে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা নিরসনে ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা। বিএনপি ১৫টি নোট অব ডিসেন্ট দিলেও দলটিকে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতিতে আপত্তি তুলে নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। জামায়াতকে নির্বাচনের আগে গণভোট এবং নিন্মকক্ষে পিআরের দাবি ছাড়তে অনুরোধ করা হয়েছে। বিএনপির দিক থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে উচ্চকক্ষে পিআরের বিষয়টি তারা পর্যালোচনা করবেন। তবে জামায়াতকে আগে নির্বাচনের আগে গণভোট এবং নিম্নকক্ষে পিআরের দাবি প্রকাশ্যে ত্যাগ করতে হবে।
অন্যদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিএনপি সনদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন আসন্ন সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন মেনে নিলে তারা সমঝোতায় রাজি আছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি গণভোটের সময় নিয়ে এখন নমনীয় হলেও জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট থাকতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে। সব দলের মধ্যে আলোচনা নিয়ে তাদের দিক থেকে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। উপরোন্ত রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে জুলাই সনদ অধ্যাদেশ জারি করারও দাবি জানানো হয়েছে। যা অসাংবিধানিক এবং পরবর্তীতে আইনী জটিলতায় পড়তে পারে বলেও বিশিষ্টজনরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার এ দলটি জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাতে স্বাক্ষর করা থেকেও বিরত রয়েছে। এ অবস্থায় গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। আজ এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে তার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দূর না হলে সরকারের সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
এ নিয়ে ৭ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দলের জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। এ সময় বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, যাদের সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি তারা আজ নিজেরাই একটা অবস্থা তৈরি করছে যাতে নির্বাচন ব্যাহত হয়।
অবিলম্বে জুলাই সনদ এবং চলতি মাসেই গণভোট আয়োজনের দাবিতে গত ৬ নভেম্বর জামায়াতসহ ইসলামী সমমনা ৮ টি দল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করে। সেই অনুষ্ঠানে জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আপনাদের চালাকি আমরা বুঝি, আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আমরা আবিষ্কার করবো। আমরা এখনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, তাহলে আঙুল বাঁকা করবো, ঘি আমাদের লাগবেই।
এদিকে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোট প্রসঙ্গে গত ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছে। পরিবর্তন ছাড়া অভ্যুত্থান, নির্বাচন, ঐক্যমত কমিশন সবই ব্যর্থ হবে। তিনি খানিকটা হতাশা প্রকাশ করে আরো বলেন, অভ্যুত্থানের সুফল যদি প্রত্যেক মানুষ না পায়, কেবল রাজনৈতিক দল ও কিছু মুষ্টিমেয় ব্যক্তি পায় তাহলে এটা কোন পরিবর্তন হবে না। জনগণ আবার রাস্তায় নামবে। একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দৈনিক নয়া শতাব্দী বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এখন সময়ের দাবি। এ কাজে সরকার ব্যর্থ হলে দীর্ঘমেয়াদে অগণতান্ত্রিক শাসনের ফাঁদে পড়বে দেশ।
এ দিকে গত ৩০ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন অধিকার তাদের ওয়েবসাইটে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৮১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত শিকার হয়েছেন। গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৯ জন, মব সৃষ্টির মাধ্যমে গণপিটুনি দেওয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জন। অধিকারের পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়কালের মধ্যে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ২৪২টি। ১৪ মাসে কারাগারে ৮৮ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৬৮৭ জন। অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান অন্তবর্তী সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট ( আইএসআই ) গেল ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনো নাজুক। রাজনৈতিক সহিংসতা, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি মানুষের অবিশ্বাস এখনো রয়ে গেছে। সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, অন্তবর্তী সরকারের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে ২১টি বৈঠক করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে করেছে। উল্লেখ্য উপরোক্ত দুটি বিষয়ের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
৩ দফা দাবিতে রাজপথে আছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। রাজধানীতে কর্মসূচি পালনকালে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল থেকে সারাদেশে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা। অথচ কয়েকদিন পরেই স্কুল গুলোতে শুরু হবে বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা।
অন্যদিকে ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি নিয়ে চলছে টানটান উত্তেজনা। বলা যায় গত ১৪ মাসে দলটির পক্ষ থেকে সরকারের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যা নিয়ে জনমনেও বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি কঠোর হস্তে দমন করা হবে সরকার এমন মনোভাব প্রকাশ করলেও ডিএমপি শনিবার রাজধানীর ১৪২টি স্থানে নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠিত করে। রাজধানীতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা টহল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীমুখী যানবাহনে তল্লাশির পাশাপাশি বেড়েছে আটকের সংখ্যাও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব চ্যালেন্জ মোকাবিলা করে দেশকে নির্বাচনমুখী করাই এখন সরকারের দায়িত্ব।পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদ সংক্রান্ত যেসব শর্তে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেনি সেগুলোর ব্যাপারে সরকারের ওপর দায় থাকে । তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে জোর করে শর্তে রাজি করানোর বিষয়টি এখন কেন উঠছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, আমার জানা মতে কমিশনের আলোচ্য ২০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে ১২টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি সেগুলো জোর করে ঐকমত্যের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তাগাদা দেওয়ার প্রয়োজন কেন হচ্ছে? একদল যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে চাইছে না, তা গ্রহণ করতে দলটিকে জোর করার কী দরকার? একজনের এজেন্ডাতো অন্যজন দিতে পারে না। এই প্রসঙ্গটা এখন কেন আসছে। এখন যেটা দরকার সেটা হলো- ঐকমত্যে আসা ১২টি বিষয় কীভাবে জাতীয় সংসদে পাশ করানো যায়, জাতীয় সংবিধানে অন্তুর্ভূক্ত করানো যায় তার ব্যাপারটি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তাভাবনা করার।